Call us : 09032-56212

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৪তম নজরুল জন্মজয়ন্তী

Published: 2023-05-25

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী ও বাংলাদেশে জাতীয় কবিকে ফিরিয়ে আনার ৫১তম বছরপূর্তি উপলক্ষে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদিনব্যাপী নজরুলজয়ন্তী শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে নজরুলের আগমনের ৫১ বছর পূর্তিকে স্মরণ করা হয়। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, কবি নজরুলই আমাদের জাতীয় কবি হবেন এই ভাবনার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি কবিকে দেশে এনে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছেন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ১০ জ্যৈষ্ঠ কবি নজরুল দেশে এসেছিলেন, ১১ জ্যৈষ্ঠ তার জন্মবার্ষিকী। ৫১ বছর আগে কবির প্রত্যাবর্তন হয়েছিল; ১২৪ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতার হাত ধরে তিনি দেশে ফিরেছিলেন। সেই দিনকে আমরা কবির জন্মজয়ন্তীর সঙ্গে মিলিয়ে একদিন আগে থেকেই আমরা ভবিষ্যতে সরকারিভাবে উদযাপন করা শুরু করব। আর এ জন্য নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। কেননা, তিনিই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের সামনে এনেছেন।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কবি নজরুল আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন যেন একই আত্মা। তাদের কর্ম ও স্বপ্ন ছিল একই ধরনের। নজরুল যেমন ছিলেন বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি; তেমনি বঙ্গবন্ধুও ছিলেন রাজনীতির কবি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আর স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই জাতির পিতা কবি নজরুলকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।
পদকপ্রাপ্ত খিলখিল কাজী বলেন, কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আমরা যেমন অনেক কাজ করছি, তেমনি তার অনেক কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে। কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বাংলার মধ্যে বেঁধে রাখার কবি নন। এখন সময় এসেছে সেদিকে নজর দেওয়ার। কবি নজরুলের বিদ্রোহীসহ অন্যান্য কবিতা অনুবাদের মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। নজরুলের জীবনকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে এনেছিলেন। এর পর নজরুল আর ভারতে ফেরত যাননি। ১৯৭৬ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশের মাটিতে কবির সমাধিসৌধ নির্মিত হয়। সমাধিসৌধ বাঙালির পবিত্র অঙ্গন। বঙ্গবন্ধু সেদিন নজরুলকে বাংলাদেশে না নিয়ে এলে এ দেশে নজরুলের আগমন সত্যিই হতো কিনা সে প্রশ্ন থেকে যায়। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগের কারণে সেদিন কোনো পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন ছাড়াই নজরুলকে বাংলাদেশে আনা সম্ভব হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয় প্রবর্তিত নজরুল পদক-২০২৩ ঘোষণা করা হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। এ বছর নজরুলসংগীতে সংগীতশিল্পী নীলুফার ইয়াসমিন (মরণোত্তর) ও কবি পরিবারের খিলখিল কাজী; নজরুল স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রচারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ও নজরুল গবেষণায় আমেরিকান নজরুল গবেষক উইনস্টন ই. ল্যাংলি পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে কবি পরিবারের খিলখিল কাজী ও অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সশরীরে উপস্থিত থেকে পদক ও সম্মাননা গ্রহণ করেন। প্রায় সাড়ে চার কেজি ওজনের পদক ও ৫০ হাজার টাকার চেক তাদের হাতে তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী ও উপাচার্যসহ অন্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত নজরুল পদক প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে যে সম্মাননা প্রদান করেছি, সেটিকে এবার পদকে রূপান্তর করা হয়েছে। নজরুল পদককে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত পদক হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সে জন্য যাকে-তাকে আমরা এই পদক দিতে চাই না। এবারেও যে চারজনকে নজরুল পদক দেওয়া হয়েছে, তাদের নাম অত্যন্ত নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করে নির্বাচিত করা হয়েছে। কোয়ালিটির ব্যাপারে কোনো আপস করা হয় না।
এর পর অতিথিরা জয়ন্তী উপলক্ষে বইমেলার উদ্বোধন করেন। বইমেলায় নজরুল সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রকশনা স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে মুখ্য আলোচনা করেন ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুমিতা চক্রবর্তী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. রুবেল আনছার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শোয়াইব জিবরান। আলোচনা করেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কল্পনা হেনা রুমি।
সন্ধ্যা ৬টায় নাটক, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী মৃত্যুবরণ করায় ১২৪তম নজরুলজয়ন্তীকে কল্যাণী কাজীর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।