রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল সারাজীবন তাঁদের বচন ও লেখনে মানুষের উপর আস্থা রাখা, ভরসা রাখার কথা বলেছেন। একজন বলেছেন ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান’ অন্যজন বলেছেন ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’ এটাই তাঁদের জীবন দর্শন। আমাদের সেটা ধারণ করতে হবে ।২৮ শে আগস্ট রবিবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের কনাফরেন্স কক্ষে রবীন্দ্র নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
তিনি বলেন, ২২শে শ্রাবণ কিংবা ১২ই ভাদ্র এই দিনগুলো তখনি সার্থক হবে যদি আমরা তাঁদের আদর্শ আমাদের জীবনে কিছুটা হলেও ধারণ করতে পারি। মানুষের উপর যে আস্থা সেটি রাখতে হবে। এখানে কোন জাত নেই, পাত নেই, ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, গোত্র নেই, উচ্চতা নেই; শুধু মানুষ পরিচয়ই বড়। আমাদের নানা বিদ্যা নানা কিছু শেখাবে, নানা বিভক্তি শেখাবে, পৃথক করবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল যে বক্তব্য সেটা হচ্ছে সার্বিক অর্থে মানবজাতির যদি কল্যাণ না করা যায় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। মানুষে মানুষে বিভক্তি করে যে বাঁচা এই বাঁচা শান্তির বাঁচা নয়। বেঁচে থাকা শান্তিময় হবে যদি আমরা মানুষে মানুষে যে সম্পর্ক সেটিকে আরও সুদৃঢ় করতে পারি, অন্যকোন কিছুতে নয়।
উপাচার্য বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ছিলেন বাঙালি জাতির দুই মনীষী। কোন জাতিতে যদি মনীষী জন্মগ্রহণ না করে তাহলে ওই জাতি বিশ্ব দরবারে কোন অবদান রাখতে পারে না। বিশে^র অনেক জাতিতে যেসব মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন তার সেসব ব্যক্তি আটশ’ নয়শ’ তম জন্মদিন পালন করেন। আমরা চারশ’ বছর আগে পাঁচ জন সে মাপের বাঙালি খুঁজে পাই না। মহামানব যে দেশে জন্মগ্রহণ করেনা সে দেশ একেবারে তলানিতে থাকে। চিন্তা চেতনা আবিষ্কার কোন কিছুই আগায় না। বাঙালির মধ্যে বড় মাপের মানুষ নাই বললেই চলে। যারা জন্মেছেন তারাও সাম্প্রতিক কালে। একশ’ বা দুইশ’ বছর আগে। পৃথিবীর ইতিহাসে একশ’ দুইশ’ বছর কিছুই না। তাহলে বাঙালি একটা বড় জাতি হবে কী করে? তবে আমাদের এখন মনীষী জন্মগ্রহণ শুরু করেছে। তাঁদেরকে আমাদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের জীবনে রবীন্দ্র ও নজরুল দর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল; তাঁদের জীবনে সার্টিফিকেট ছিল না কিন্তু তাঁরা বড় মানুষ হয়েছিলেন কারণ তাঁরা জীবনের পাঠ নিয়েছেন। আমাদের সার্টিফিকেট আছে অথচ আমরা জীবনের পাঠ নেই নি। রীন্দ্রনাথ ও নজরুল এমন দুইজন মানুষ যারা আমাদের খাদ্য দেন না, বস্ত্র দেনা কিন্তু তাঁরা আমাদের মানুষ হতে শেখান। আমরা যেন তাঁদের আদর্শ খানিকটা হলেও গ্রহণ করি। কেননা পশুর সাথে মানুষের পার্থক্য হলো মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। চিন্তা করতে পারে ও চিন্তার প্রয়োগ করতে পারে। সেই স্বপ্ন কী? মানুষ যাতে সুখে থাকে, সব মানুষ যাতে ভালো থাকে।পশুরা তেমন স্বপ্ন দেখে না।
রবীন্দ্র ও নজরুলের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবউদ্দিন-এর সভাপতিত্বে সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উদ্যাপন কমিটির সদস্য ড. মো. তুহিনুর রহমান। সঞ্চালনা করেন ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের অতিরিক্ত পরিচালক রাশেদুল আনাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আহমেদুল বারী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল হালিমসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে কার্যসূিচ সমাপ্ত হয়।
Access your account, change settings or access your dashboard.