যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সংগীতের সহযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর শুরু হয় বিজয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর শহিদদের স্মরণে ক্যাম্পাসে ‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য’ ও ‘চির উন্নত মম শির’-এ ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কর্মচারী সমিতি (১১-১৬), কর্মচারী ইউনিয়ন( গ্রেড ১৭-২০) অগ্নি-বীণা হল, দোলন-চাঁপা হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসহ বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ,দপ্তর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ, প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড.জান্নাতুল ফেরদৌস, কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রামিম আল করিমসহ অন্যরা।
দিবসটি উপলক্ষ্যে দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট কমিটির আহŸায়ক প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বঙ্গন্ধুর পরিবার, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহিদ সকলের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু যে আর্দশের বীজ বপন করেছিলেন সে আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু শুধুই নয় মাসের যুদ্ধ নয়। এটি হচ্ছে মুক্তির সংগ্রাম। এই সংগ্রামের দীর্ঘ ২৩ বছরের ইতিহাস রয়েছে। ধীরে ধীরে একটি পর্যায় বঙ্গবন্ধু অতিক্রম করেছে। বাঙালিদের মধ্যে তো সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি। সব দল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একমত ছিলেন না। অনেকগুরুত্বপূর্ণ নেতা যেমন মাওলানা ভাসানীর মতো সামনের দিকের নেতার পদক্ষেপ ছিল, সেটাও পাকিস্তানি কূটকৌশলের পক্ষে গিয়েছিল। বিশ্বের যে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো যারা আজকে মানবতা শেখায়, নানা রকমের ছবক নিয়ে আসে তাদের অবস্থা ও অবস্থান ছিল প্রশ্ন সাপেক্ষ। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম মূলত অভ্যন্তরীণ লড়াই ছিল না। মূলত দুটি দেশের গোলাগুলি ছিল না। এটি ছিল একটি আদর্শের লড়াই। সে আদর্শ ছিল শোষণমুক্ত, ধর্ম নিরপেক্ষ একটি সুখী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই।
এবারের বিজয় দিবসের প্রত্যয় হিসেবে সাংবিধানিক ধারাবাহিতকা রক্ষার কথা তুলে ধরে ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা সাংবিধানিক ধারাবাহিতকা রক্ষা করতে চাই। এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার মধ্যদিয়ে আগামীর যে নির্বাচন আছে এই নির্বাচনকে ফলপ্রসূ করতে চাই। আর সেজন্য সকলকে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার। আলোচনা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, কর্মচারী সমিতির সভাপতি (গ্রেড১১-১৬) মো. কামরুজ্জামানসহ অন্যরা। স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য-সচিব ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ। সঞ্চালনা করেন মাসুদুর রহমান ও জান্নাতুল নাঈম।
দিবসটি স্মরণে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগিতায় আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন। দুপুর আড়াইটায় শেখ রাসেল কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খেলাধুলো অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর বিকেল সাড়ে চারটায় বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান অর্থাৎ ‘বাহাত্তরের মূল সংবিধান’ এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি ও ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উপলক্ষ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের প্লাজাকে ‘সংবিধান আঙিনা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ‘ধ্রুব’৭২’ স্থাপনার উদ্বোধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ধ্রুব’৭২ স্মারক-স্থাপনা উদ্বোধন ও সভায় সভাপত্বি করেন ধ্রুব’৭২ স্থাপনার রূপকার ও উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনা করেন ট্রেজারার প্রফেসর ড.আতাউর রহমান, সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রিয়াদ হাসান, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আজিজুর রহমান ও আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আহসান কবীর। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে জয়ধ্বনি মঞ্চে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) জয়ধ্বনি মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
Access your account, change settings or access your dashboard.