জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jatiya Kabi Kazi Nazrul Islam University

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

Published: 06-08-2025 Updated: 06-08-2025 01:16:08

latest news

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা’ বিষয়ক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে ০৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখ মঙ্গলবার সকালে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চরম সাহসিকতার সাথে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সভাপতি মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যত বড় ত্যাগ ততো বড় অর্জন করা সম্ভব। ৯০, ৭১ ও ২৪ এর কোন আন্দোলনই ত্যাগ ছাড়া সফলতা আসেনি। ৯০ এ যেমন কার্ফিউ ভঙ্গ করে মিছিলে গিয়েছিলাম, একইভাবে জুলাই ২৪ এও কার্ফিউ ভঙ্গ করে মিছিলে গিয়েছিলাম।’ জুলাই এক্য, প্রেরণা ও সাহসের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে মাননীয় উপাচার্য বলেন, ‘আমরা যেন সামনের দিনগুলোতে জুলাই চেতনাকে ধারণ করে কাজ করি। আগামীতে যে সরকারই আসুক ৫ আগস্টের চেতনা থেকে বিচ্যুত হলে তাদেরও একই অবস্থা তৈরি হবে।’ প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মতো জুলাই ২০২৪ এর ইতিহাস সংযোজন করার আহŸান জানান মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আসির ইনতিশারুল হক এর শ্রদ্ধেয় পিতা আ.হ.ম এনামুল হক লিটন এবং শহীদ মো. হৃদয় ইসলাম এর শ্রদ্ধেয় মাতা মাজেদা খাতুন। শহীদ আসির ইনতিশারুল হক এর শ্রদ্ধেয় পিতা আ.হ.ম এনামুল হক লিটন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের দিনটি একদিকে আনন্দের এবং একই সাথে বেদনার। কারণ ২০২৪ সালের আজকের দিনে আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি এটা আমার জন্য বেদনার। তবে আমার সন্তানের জীবনের বিনিময়ে দেশ আজ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে এটা আনন্দের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতি, নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’ শহীদ মো. হৃদয় ইসলাম এর শ্রদ্ধেয় মাতা মাজেদা খাতুন বলেন, ‘আমি আমার ছেলের বিচার এখনো পাইনি উল্লেখ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।’

প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান লিটন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা ভুলে যাওয়া জাতি, সবকিছু সহজেই ভুলে যাই। তবে জুলাই ২৪ কখনো ভুলে গেলে চলবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই আমাদের কখনো জুলাইকে ভুলতে দিবে না। আমি অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংরক্ষণ করে রেখেছি।’ পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো এতো বৈচিত্রময় ফ্যাসিস্ট আর আছে বলে আমার জানা নাই উল্লেখ করে প্রধান আলোচক বলেন, ‘এদেশের কর্তৃত্ব নেওয়ার জন্য পার্শবর্তী দেশের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। অনেক কষ্টের বিনিময়ে আজকের এই অর্জন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই অর্জনকে দেশের স্বার্থে কাজে লাগাতে হবে। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’

আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফ্তি মো. আব্দুল হাকীম। সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর শুরু হয় আলোচনা সভা। ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই চব্বিশ’ শীর্ষক জুলাই স্মরণিকার মোড়ক উম্মোচন করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ বর্ষপূর্তি উদ্যাপন কমিটির আহŸায়ক ও কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এইচ এম কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচানা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ বর্ষপূর্তি উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব মো. অলি উল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসাইন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. তারানা নুপুর ও আহত ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নীরব কুমার দাস। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে ঢাক-ঢোলের তালে তালে বিজয় র‌্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এবং আহতদের দ্রæত সুস্থতা কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ আসর মিলাদ মাহফিল এবং সন্ধ্যায় মন্দিরে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।