জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jatiya Kabi Kazi Nazrul Islam University

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী ১২৬তম নজরুল জয়ন্তী সমাপ্ত, দুই গুণী ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান

Published: 27-05-2025 Updated: 27-05-2025 12:02:21

latest news
‘মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’ শ্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাঁকজমকভাবে দুই দিনব্যাপী ১২৬তম নজরুল জয়ন্তী ২০২৫ সোমবার (২৬ মে ২০২৫) সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চে’ আয়োজিত নজরুল জয়ন্তীর আলোচনা সভা ও নজরুল পদক প্রদান পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি. আর. আবরার।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পদক প্রদান পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এম জাকির হোসেন খান। স্বাগত বক্তব্য দেন নজরুল পদক প্রদান উপ-কমিটি ২০২৫ এর সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স)।
অনুষ্ঠানে নজরুল গবেষণায় অবদানের জন্য নজরুল গবেষক প্রফেসর ড. রশিদুন্ নবী এবং নজরুল সংগীতে শিল্পী মো. ইয়াকুব আলী খানকে নজরুল পদক প্রদান করা হয়। তাঁদের হাতে নজরুল পদক ও সনদ তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান ও নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নজরুলকে স্মরণ করছে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. সি. আর. আবরার বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জালেমের বিরুদ্ধে, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নজরুলের গান, কবিতা আমাদের তরুণদেরকে, আমাদেরকে উদ্দীপিত করেছে, সেই নজরুলকে আজকে এতবড় একটা মেলার মধ্যদিয়ে স্মরণ করে তাঁরপ্রতি আমাদের যে জাতীয় ঋণ তা সামান্য পরিশোধের চেষ্টামাত্র।
নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি মন্তব্য করে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা জাতি হিসেবে যেমন একটা অস্থির সময় অতিবাহিত করছি, ঠিক তেমনি আমাদের সামনে অপার সম্ভাবনার সুযোগ এসেছে। জাতি হিসেবে একটা অপশক্তিকে পরাজিত করেছি। এখন বিভিন্ন প্রকার সংস্কার কাজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এই সংস্কার কাজ এককভাবে শুধু সরকারের নয়। আমরা জাতি হিসেবে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে চাই। আমি সকলের কাছে আহবান জানাই সংকীর্ণ বা দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সকলে মিলে এই সংস্কার কাজে এগিয়ে আসুন। দেশের জনগণ যে উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে জনগণের সেই উদ্দেশ্য যেন এই সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে।
এখনও কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজমান উল্লেখ করে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে লেখাপড়া, পরীক্ষা চালু করার মধ্যদিয়ে অস্থিরতা দূর করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে কবি নজরুলকে স্মরণ করে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিংশ শতকে যাঁর কর্মের জন্য আজ ১০০ বছর পরেও আমরা তাঁকে স্মরণ করি। আগামীতে তিনি আরও বলিষ্ঠভাবে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। কবি নজরুলের দর্শন কোনভাবেই অবজ্ঞা করার নয়। তিনি সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্য, দলাদলি, অন্যায় অত্যাচার দূর করতে চেয়েছিলেন। আর সেজন্য যে অসীম সাহস দরকার সেটা আমরা তাঁর কবিতা-গানে লেখনীতে দেখতে পাই। তিনি প্রেমের কবি, তিনি বিদ্রোহেরও কবি। তিনি তাঁর যে অনবদ্য ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি করেছিলেন তা এই বাংলাদেশেই হয়েছিল। তিনি সাম্প্রদায়িকতা দূর করার জন্য বলেছিলেন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে গালাগালি নয় বরং গলাগলির জন্য কাজ করে যাব।
তিনি আরও বলেন, বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নজরুলের বিচরণ রয়েছে। যাঁর অবদান আমাদের সমাজ সংস্কৃতি সবজায়গায় সর্বভাবে বিরাজমান। তাঁর এই অবদান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। নজরুলের দর্শনকে ধারণ করে ১৯৭১ পেয়েছি এবং একইভাবে জুলাই-আগস্টে সেই যুব সমাজই সেই কাজটা সম্পাদন করেছে। নজরুলের চেতনা পূণরুজ্জীবিত করতে হবে। আবার যেন কোন অশনি আমাদের মাঝে ভর করতে না পারে, সমাজ যেন এগিয়ে যায়। যেভাবে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়েছি আগামীতেও হারমনির জন্য এই যুব সমাজকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
নজরুল জয়ন্তীর কর্মসূচিসমূহ সফলভাবে সম্পন্ন করতে যাঁরা কাজ করেছেন এবং যাঁদের আগমনে এই অনুষ্ঠান পরিপূর্ণতা পেয়েছে সেই সকল অতিথিবৃন্দকে মাননীয় উপাচার্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
আলোচনা সভা ও পদক প্রদান পর্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ. এইচ. এম. কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) ড. মো. আশরাফুল আলমসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রায়হানা আক্তার ও মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আব্দুল মোমেন।
এছাড়া সকাল থেকে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে আন্তর্জাতিক নজরুল-বক্তৃতামালা-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষক, গবেষক ও নজরুল অনুরাগীগণ এদিন চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া সন্ধ্যা সাতটায় ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চে’ আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত ও নাটক জিনের বাদশা পরিবেশিত হয়।
উল্লেখ্য দুই দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তীতে আলোচনা সভা, বইমেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সজ্জিতকরণ ও আলোকসজ্জা করাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শেষ হয় বর্ণাঢ্য আয়োজন।