জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jatiya Kabi Kazi Nazrul Islam University

বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ কে বরণ করে নিয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Published: 15-04-2025 Updated: 21-04-2025 04:21:44

latest news
সকল জরা-জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে উচ্ছ্বাস ও আনন্দের সাথে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ কে বরণ করে নিয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে ১ বৈশাখ ১৪৩২ সোমবার (১৪ এপ্রিল ২০২৫) সকালে ‘নববর্ষের ঐকতান ফ্যাসিবাদের অবসান’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নানা বয়সের দর্শনার্থীরা শোভাযাত্রায় স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।
নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে আনন্দ শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশ-পাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। বৈশাখী সাজে এই শোভাযাত্রা বাদ্যের তালে তালে এগিয়ে চলে, হাতে হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির শিল্পকাঠামো শোভাযাত্রাকে দেয় বাঙালির চিরায়ত আবহ। এরপর গাহি সাম্যের গান মঞ্চে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বক্তব্যের শুরুতে মাননীয় উপাচার্য সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এসময় তিনি সকলের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। মাননীয় উপাচার্য বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির সাংস্কৃতিক জীবনে নানা ধরণের উৎসব পালিত হয়ে থাকে, আমরাও নানা উৎসব পালন করে থাকি। বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের উৎসব। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সার্বজনিন উৎসব। আমাদের প্রাণের মিলন মেলা বৈশাখী উৎসব। বৈশাখী মেলা ও উৎসব বাঙালির নিজস্ব সম্পদ।’
নববর্ষের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলিত হওয়ারপর নববর্ষ পালন শুরু হয়েছে। ৯৬৩ হিজরী ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাদশা আকবর সিংহাসনে বসার হিজরী বছরকে গণনায় নিয়ে যে ফসলি হিজরী প্রবর্তন করা হয়, তাই কালক্রমে বাংলার সনে রূপান্তরিত হয়। পহেলা বৈশাখ পুরাতন আবর্জনা দূর করে নতুন জীবনকে আহŸান করে। নববর্ষ উৎসবে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নতুন করে বন্ধন দৃঢ় হয়। ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে আমরা বৃহত্তর জীবন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। একইসঙ্গে জাতি হিসেবে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। যে ইতিহাস অনেকটা আমরা নাগরিক জীবনে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলাম। নববর্ষের মাধ্যমে আমাদের প্রাণে নতুন করে তা সঞ্চার হয়। আমরা মনে করি সাংস্কৃতিক জাতি বা জাতি রাষ্ট্র গঠনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে শক্তি যোগায়। শুভ ইচ্ছা, শুভ সংকল্প সকল বাধা কাটিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণায় নতুনভাবে উদ্দিপিত করে। নববর্ষের চেতনায় আনন্দলোকে সমবেত হয়ে সকলের আনন্দে আনন্দিত হওয়া। পহেলা বৈশাখ তাই আমাদের জাতীয় জীবনে ও সংস্কৃতিতে এক নির্মল আনন্দঘন শুভ দিন। সকল মানুষের শুভ কামনার মধ্য দিয়ে মানব স্বীকৃতি তার মূল কথা।’ পরিশেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় মাননীয় উপাচার্য বলেন, ‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো এলো রে, বৈশাখী ঝড় এলো এলো মহীয়ান সুন্দর।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফের ড. এ. এইচ. এম কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদযাপন কমিটির আহŸায়ক প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স), চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব নগরবাসী বর্মন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চের পাশে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মোট ২৬টি স্টল বসেছে। দুপুরে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে উম্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠে বিশ্ববদ্যালয় পরিবার। একই মঞ্চে সন্ধ্যারপর শুরু হয় বৈশাখের গান, লোকগান ও লোকনৃত্য। সবশেষে রাতে কিচ্ছাপালার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালা।
এর আগে চৈত্রসংক্রান্তি ১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষ্যে (১৩ এপ্রিল ২০২৫) রবিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঘুড়ি এবং সন্ধ্যারপর ফানুস উড়ানো হয়।